বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) স্বাক্ষরের মাত্র তিন বছরের মাথায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্বিগুণ করেছে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এটিকে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২২ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়, আর বাস্তবায়িত হয় একই বছরের ১ মে। এই চুক্তি কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করেনি বরং এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দুটি প্রধান খেলোয়াড়ের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা আরও গভীর করেছে।
চুক্তিটি স্বাক্ষরের সময় লক্ষ ছিল, পাঁচ বছরের মধ্যে তেল-বহির্ভূত বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি উন্নীত করা এবং উভয় দেশেই অসাধারণ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। তিন বছরের মধ্যে চুক্তিটি উল্লেখযোগ্যভাবে শুল্ক এবং অ-শুল্ক বাধা হ্রাস করেছে, ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সহজ বাজার অ্যাক্সেস প্রদান করেছে এবং অবকাঠামো, সরবরাহ, ফিনটেক এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় ক্ষেত্রগুলিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেছে। ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, উপসাগরীয় ও আফ্রিকান বাজারের প্রবেশদ্বার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত এফটিএ ভারতের বৃহত্তর বাণিজ্য উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি মডেল হয়ে উঠেছে, যা শতাব্দী ধরে চলমান ভূ-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের সাথে অর্থনৈতিক সুবিধাগুলিকে একত্রিত করে। এটি দেখায় যে কীভাবে সক্রিয় কূটনীতি এবং অর্থনৈতিক কৌশল রূপান্তরমূলক ফলাফল প্রদানের জন্য একসাথে কাজ করতে পারে।
ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক ভাগ করে নেয় যা শক্তিভিত্তিক বিনিময় থেকে বহুমুখী অংশীদারিত্বে বিকশিত হয়েছে। গত পাঁচ বছরে কোভিড-১৯ মহামারীর মতো বিশ্বব্যাপী ব্যাঘাত এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের বাধা সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে সিইপিএ স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা একাধিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতের রপ্তানি টেক্সটাইল এবং রত্ন, অটোমোবাইল, খাদ্য পণ্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের মতো ঐতিহ্যবাহী পণ্য থেকে বৈচিত্র্যময় হয়েছে। অন্যদিকে, ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত তেল, পেট্রোলিয়াম পণ্য, মূল্যবান ধাতু এবং রাসায়নিক আমদানি করে।
ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত গত পাঁচ আর্থিক বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে, যা নীতি এবং বাজারের গতিশীলতার পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি বাজার অ্যাক্সেস এবং পণ্য বৈচিত্র্য বৃদ্ধি দেখায়। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আমদানি, যার মধ্যে প্রধানত অপরিশোধিত তেল এবং মূল্যবান ধাতু রয়েছে, তাও বেড়েছে। মোট বাণিজ্যের বৃদ্ধি গভীরতর অর্থনৈতিক একীকরণ এবং প্রসারিত বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বকে প্রতিফলিত করে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০২০-২১ সালে ৪৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দ্বিগুণ হয়ে ২০২৩-২৪ সালে ৮৫.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে ১০৫.৭৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন:
