ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ 

দেশে বিদেশি ঋণে রেকর্ড, ছাড়াল ১১২ বিলিয়ন ডলার

ঢাকা এজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৩৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শেয়ার

দেশে বিদেশি ঋণে রেকর্ড, ছাড়াল ১১২ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ আবারও নতুন রেকর্ড গড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১১ হাজার ২১৬ কোটি ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।

মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে এই বিদেশি ঋণের পরিমাণ, যা অর্থনীতিবিদদের মধ্যে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অবকাঠামো প্রকল্প, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপে এই ঋণ বৃদ্ধিকে বড় একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বৈদেশিক ঋণের মধ্যে প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলারই বেড়েছে গত সাড়ে ১৫ বছরে, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে। এই সময়ে সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবি-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ব্যাপক হারে ঋণ গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে, বেসরকারি উদ্যোক্তারাও বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের ঋণে ঝুঁকেছেন।

গত কয়েকবছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি থাকায় দেশে ডলারের সংকট তৈরি হয়। বিদায়ী সরকারের সময়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও রিজার্ভের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রিজার্ভে স্থিতিশীলতা এসেছে। প্রবাসী আয় বেড়েছে, পাশাপাশি বিদেশি ঋণের প্রবাহ চালু থাকায় ডলারের বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুন মাস (অর্থবছর) শেষে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১১২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন বা ১১ হাজার ২১৬ কোটি ডলার। এই অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চ মাসে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। সেই হিসেবে গত তিন মাসের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে ৭৩৬ কোটি ডলার। আর ছয় মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৪৩ কোটি ডলার; গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ ছিল ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশের বিদেশি ঋণের বড় অংশ সরকারের এবং এই ঋণ মূলত বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া হয়। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, অতীতে অনেক ঋণ অপচয়ে ব্যবহার হয়েছে, যা বন্ধ করতে হবে। ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে দেশের পরিশোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, জিডিপি অনুপাতে বিদেশি ঋণ এখনো সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ঋণের সুদ এবং মূল অর্থ পরিশোধের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি যদিও স্বস্তিদায়ক, পরিশোধে যথেষ্ট চাপ এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়বে।

novelonlite28
umchltd