চলচ্চিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন বাপ্পি চৌধুরী 

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৫:০৪ পিএম, ৬ জুন ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:০৮ পিএম, ৬ জুন ২০২৪ বৃহস্পতিবার

সময়টা ভালো যাচ্ছে না চিত্রনায়ক বাপ্পি সাহা ওরফে বাপ্পি চৌধুরীর। পরপর তার প্রায় এক ডজনের মতো সিনেমা হয়েছে ‘সুপারফ্লপ’। অনেক দিন ধরেই নতুন সিনেমার সংকটে ‘বাজে ছেলে’র বাপ্পি। মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো প্রেক্ষাগৃহ থেকে মুখ থুবড়ে পড়লে নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে শরীর চর্চায় মন দিয়েছেন ‘ফ্লপ’ তকমা পাওয়া এই নায়ক। তাতেও ব্যর্থ তিনি। টানা দুই বছর ধরে জিম করেও নিজেকে চেনা ছন্দে ফেরাতে পারছেন না কর্মহীন বাপ্পি।

এ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যেও বেশ চর্চা হচ্ছে। সম্প্রতি এক সিনেমা প্রেমী ভক্ত ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, ‘বাপ্পি সাহাকে প্রায় ২ বছর থেকে নিয়মিত জিমে ঘাম ঝরাতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই ২ বছরে তার বডির নুন্যতম কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। উনি প্রায় তার ফেসবুক ওয়ালে জিমের ছবি দিয়ে থাকেন আর কিছু দিন পর পর নতুন কাজে ফিরবে বলে থাকেন কিন্তু, এই পড়তি নায়ক এখন পর্যন্ত কোন নতুন শুরু করতে পারলেন না। বাপ্পি সাহার সবার আগে উচিত অভিনয়টা শেখা। কারণ, তিনি অভিনয় যথেষ্ট কাঁচা। বাপ্পির কান্না দেখলে দর্শক হাসে আর অভিনয় দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাইতো উনি বেশ কয়েক বছর থেকে বেকার।’

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নতুন সিনেমার খবরে নেই বাপ্পি সাহা। মাঝে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামের ব্যয়বহুল একটি সিনেমায় যুক্ত হয়েও ছিটকে পড়েন তিনি। বাপ্পি অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। এই নায়কের ‘সুলতানা বিবিয়ানা’ সিনেমার পর এ পর্যন্ত যতগুলো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তা সেভাবে ব্যবসার আলো দেখেনি। যার কারণে অনেক প্রযোজক-পরিচালক তাকে নিয়ে কাজ করতে অনাগ্রহী।

বার বার ফেরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন বাপ্পি। যার কারণে হতাশ তিনি। সর্বশেষ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়েও ভরাডুবি হয় এই অভিনেতার। এদিকে, কয়েক বছর ধরে ঝুলে আছে বাপ্পির ‘ডেঞ্জার জোন’ সিনেমাটি। ২০১৭ সালের মার্চে সিনেমাটির ঘোষণা আসে। এরপর শুটিং শেষ করে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে নানা জটিলতায় আজও সিনেমাটি আলোর মুখ দেখেনি। অনেক আগেই অর্থ যুগ পার হলেও কবে মুক্তি পাবে এই সিনেমাটি জানে না এর নির্মাতা বেলাল সানীও।

এছাড়াও ‘৫৭০’, ‘কুস্তিগির’, ‘সিক্রেট এজেন্ট’ ও ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ নামের সিনেমাগুলোর নির্মাণ কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু আজও আলোর মুখ দেখেনি। আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আর ঘোষণাতেই আটকে আছে ‘প্রেমের বাঁধন’, ‘কোভিড-১৯ ইন বাংলাদেশ’ ও ‘ঢাকা ২০৪০’ সিনেমা তিনটি। সিনেমাগুলোর হয়েছে জমকালো মহরত। আবার দু-একটার ক্যামেরা ওপেন হয়ে থমকে যায়। নতুন করে সিনেমাগুলো ফের শুরু হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।

টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যর্থ বাপ্পি। কিছুতেই যেন কাটছে না তার শনির দশা। বলা চলে হারাতে বসেছেন এই নায়ক। বাপ্পি প্রসঙ্গে কথা হয় এ সময়ের ব্যস্ত ও প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব প্রযোজক-পরিচালকরা বাপ্পি প্রসঙ্গে বলেন, ‘তাকে নেওয়ার চিন্তা করলেও পিছু হাটতে হয়। কারণ, বাপ্পিকে নিতে হলে ১০ লাখ টাকা পারিশ্রামিক দিতে হবে। মনে হয় না তাকে নিয়ে কাজ করে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। এমনিতেই শাকিব খান ছাড়া সেভাবে সিনেমা চলে না। বাপ্পিকে নিলে তো হল মালিকরাই সিনেমা নিতে চাইবে না। তিনি তার পারিশ্রামিক ফিরিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিতে পারবেন? তাছাড়া অনেক নায়িকাই তার সঙ্গে এখন আর কাজ করতে চান না। বাপ্পি পারিশ্রামিক ৩ লাখ নিলে অনেকেই হয়ত নতুন করে ভাববে।’

এক আলাপে ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেছিলেন, ‘দু-একটা সিনেমা হিট করার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক হাঁকাচ্ছেন। আর এসবের জন্যই তারা অকালে হারিয়ে গেছেন। ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা হয়েছে। যার প্রমাণ বাপ্পি। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক চাওয়া আর দর্শকবিমুখের কারণে অল্প সময়ই হারিয়ে গেছেন তিনি। শাকিব খান ছাড়া কারো নামে সেভাবে এখন আর সিনেমা চলে না।’

একের পর এক সিনেমা ফ্লপ হওয়ার কারণে ২০১৯ সালে বাপ্পি নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে সিনেমা প্রযোজনায় আসার কথা জানিয়েছিলেন এক সাক্ষাৎকারে। তবে সেই কথা জানানোর কয়েক বছর পার হয়েছে। তবে আজও আসেনি নায়কের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা। নতুন সিনেমার খবরে না থাকায় সবাই বাপ্পিকে ভুলতে বসেছেন।