Deprecated: str_replace(): Passing null to parameter #3 ($subject) of type array|string is deprecated in /home/ph4m74q3/public_html/common/config.php on line 186
সান্তোরিনি দ্বীপে কেন বিরামহীন ভূমিকম্প?

সান্তোরিনি দ্বীপে কেন বিরামহীন ভূমিকম্প?

ঢাকা এজ ডেস্ক

প্রকাশিত : ০১:০২ এএম, ২২ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার

গ্রিসের সান্তোরিনি দ্বীপের আশপাশে এই বছরের শুরুতে ঘটে যাওয়া লক্ষাধিক ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র ভূমিকম্পের রহস্য উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা। জানুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন মাস ধরে চলতে থাকা এই ভূমিকম্প ঝাঁকের কারণ ছিল ভূগর্ভে গলিত শিলা বা ম্যাগমার বিশাল চাপ ও গতিবিধি।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ম্যাগমা প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ভূগর্ভস্থ চ্যানেলের মধ্য দিয়ে অনুভূমিকভাবে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফলে ২৫ হাজারেরও বেশি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ভূকম্পনের মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের নীতি মিলিয়ে প্রতিটি ছোট কম্পনকে ভার্চুয়াল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতি তাঁদের ভূগর্ভস্থ চ্যানেল, শিলাস্তর ভাঙন ও চাপের পরিবর্তনের সঠিক মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষক ড. স্টিফেন হিক্স মত দিয়েছেন, এই ধরনের বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পূর্বাভাস দিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সান্তোরিনি, আমোরগোস এবং আনাফি—এই তিন দ্বীপের নিচে হঠাৎ প্রবল ভূমিকম্পীয় নড়াচড়া শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহেই কম্পনের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় লাখে। এর মধ্যে অনেক ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫-এর ওপরে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। পর্যটকেরা দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেন এবং আশঙ্কা বাড়তে থাকে যে, সাগরের নিচে থাকা কলম্বো আগ্নেয়গিরি হয়তো অগ্ন্যুৎপাতের দিকে এগোচ্ছে, অথবা ১৯৫৬ সালের ভয়াবহ ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো আরেকটি বিপর্যয় আসন্ন।

গবেষকেরা থ্রি-ডি ভূগর্ভস্থ মানচিত্র তৈরি করে দেখেন, সান্তোরিনি ও কলম্বো আগ্নেয়গিরির নিচ থেকে ম্যাগমা বেরিয়ে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্রতলের ১০ কিলোমিটার নিচে থাকা একটি বিশাল চ্যানেলের মধ্য দিয়ে অনুভূমিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সময় যে পরিমাণ ম্যাগমা সরে গিয়েছে তা দিয়ে প্রায় ২ লাখ অলিম্পিক মানের সুইমিং পুল ভরা সম্ভব। এই ম্যাগমা শিলাস্তর ভেঙে এগোনোর কারণেই হাজারো ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র ভূমিকম্প তৈরি হয়।

গবেষণার প্রধান লেখক অ্যান্থনি লোম্যাক্স বলেছেন, ‘প্রতিটি কম্পন যেন পৃথিবীর গভীর থেকে পাওয়া একটি বার্তা। থ্রি-ডি মডেলে ভূমিকম্পের অবস্থান ঠিক সেটিই দেখায় যা ম্যাগমার অনুভূমিক গতির ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যাশা করি।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আপাতত পরিস্থিতি স্থিতিশীল। ম্যাগমা আটকে গিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার গভীরে ঠান্ডা হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তাই অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা খুব কম। তবে আগ্নেয়গিরি বছরের পর বছর ধরে অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে—যেমনটি আইসল্যান্ডে দেখা গেছে।

গবেষকদের মতে, ভূকম্পন ও ম্যাগমার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এআই ব্যবহারের নতুন এই পদ্ধতি ভবিষ্যতে আগ্নেয়গিরির আচরণ পূর্বাভাসে বড় পরিবর্তন আনতে পারে এবং ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে।